বোতলের পানিতে প্রিয়ফুল
- আরিফ শামসুল ২৮-০৪-২০২৪

১. তোমাকে দেখে নিয়েছি শাদাশাপলার দেহে।
২. উভয়পক্ষে পক্ষপাতিত্বেও ত্বরান্বিত করেছি বিবাদ।
৩. পাখিরা হাজারবার জলের ধারে নেমে এলেও পাথরের ডানা গজাবার সম্ভাবনা কম।


যা থাকে কাছাকাছি—চেতনার পথে পথে
যেখানেই সবুজ আলস্য, মেঘেদের ঘেঁষাঘেঁষি;
সে-সর্বত্রে চলে আসে ‘তুমি’ সম্বোধন।

এই পেন্সিলটি লেখার অনুপযোগী; তবু তাকে বলি: একটা রাতের ধর্ম-পরিবর্তনে সহায়তা করো তো। মৃত-অমৃত, বিশ্ব-বহিঃবিশ্ব—সব সারাবেলা আড্ডা দেয় আমার পড়ার টেবিলে। হৃদয়ের কাছাকাছি থাকে আমার পৃথিবী সারাক্ষণ। সময় পেলেই সব প্রাণী-অপ্রাণীদের ডেকে বলি: ভালো আছ তো সব!

শাদাশাপলা—শাদাভোর—শাদামন...
আমার একজন প্রিয় মেয়ে-বন্ধুকে ডাকতাম ‘শাদাশাপলা’। যখন সে কষ্টের গলাপানিতে দাঁড়িয়ে থাকে—উত্তর আকাশ অন্ধকার করে আমি তখন ডোবার পানিতে শাদাশাপলার দেহে তাকিয়ে থাকি। মনে হয়, আমার প্রিয় পৃথিবী আমার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ডোবার পানিতে দাঁড়িয়ে রোরুদ্যমান।

সর্বভুক এই মানুষেরা মানুষ ভক্ষণেও দমে না।
আমার মানবপ্রীতি প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকে শাদাশাপলা হয়ে ডোবার পানিতে।


নদীর এপারে আমাকে সবাই ‘পানি’ বলে ডাকে;
নদীর ওপারে আমার নাম—‘জল’।
নদীটা বাবা আমার নামে রেজিস্ট্রি করেছেন;
তাই কূল ছেড়ে দিয়েছি। ঢেউয়ে ঢেউয়ে আমার বসতি।

ভাসতে ভাসতে এককূলে গিয়ে নিজেকে ‘জল’ বলে পরিচয় দিই।
কূলের স্রোত আমাকে সাদরে নিয়ে যেতে চায় গঙ্গায়।
অন্যকূলের ঢেউ-পরীরা টানাটানি করে আমার অপর বাহু...

স্নান শেষে ফিরে দেখি, ঘরে কোনো শার্ট-প্যান্টে
একটি বোতামও অবশিষ্ট নেই।


আমি এখন হাজার রকমের পাখি হতে পারি—সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে খেলি সারাবেলা ‘কপালটুনি’।

আমার মা ডাহুক ছিলেন,
তাঁর মা ছিলেন দুর্জ্ঞেয় অরণ্য!
আমি এখন রাত জেগে পড়তে পারি,
আমার মা রাত জেগে জেগে
আর্তনাদ করে গলা দিয়ে রক্ত উদ্গীরণ করতেন—বৃথাই।

আমার পাথর-বন্ধুরা না-নামে জলে না-ওড়ে আকাশে। প্রতিদিন হাজার হাজার অতিথি পাখি হয়ে আমরা পাথরের কানে কানে ঢেউয়ের শব্দ ব্যখ্যা করি। আমার পাথর-বন্ধুরা ‘কুম্ভকর্ণ’ চিরকাল।

[২০১০]

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।